প্রভাবশালীর স্বজনদের সব দোষ মাফ
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
রাজধানীর গুলশানে সোমবার বিকালে ধনাঢ্য পরিবারের তিন কিশোর কার রেসিংয়ে মেতে উঠেছিল। এ সময় আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এইচ বি এম ইকবালের ভাতিজা ফারিজ রহমানের বেপরোয়া গাড়িচাপায় চারজন গুরুতর আহত হন। তবে এ ঘটনার পর তিন দিন কেটে গেলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
দুর্ঘটনার পর পুলিশ ব্যবসায়ী এইচ বি এম জাহিদুর রহমানের ছেলেকে আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়।
পুলিশ বলছে, ভুক্তভোগী ও এমপির স্বজনদের মধ্যে আপস হয়ে যাওয়ায় কোনো মামলা হয়নি। তবে গাড়িটি এখনো থানা চত্বরে রয়েছে। এইচ বি এম ইকবাল ১৯৯৬ সালে ঢাকার রমনা-তেজগাঁও আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ঘটনার পর সাবেক এমপির ভাতিজার সাফাই গেয়ে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, ওই ছেলে গাড়ি চালানোর সময় হঠাৎ করেই একজন পথচারী সামনে পড়ে। তাকে বাঁচাতে গিয়েই এ দুর্ঘটনা। আহতদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা তারাই করেছে। গাড়িটি আটক রেখে ফারিজকে তার বাবার হেফাজতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ওই ঘটনার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে গতকাল ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, আহতরা অভিযোগ করলে মামলা নেব। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য চালকের বিরুদ্ধে একটি প্রসিকিউশন দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ইকবালের ১৬ বছর বয়সী ভাতিজার গাড়ির ধাক্কায় আহতদের মধ্যে রফিক (২৭) নামের একজনকে ওই দিন ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই ফারিজ গুলশানে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিল। চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোনে ছবি তুলে ফেসবুকে দেওয়ার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে ওই ছেলে আমাদের বলেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ওই ছেলে মদ্যপ অবস্থায় ছিল। গুলশানের ৭৪ নম্বর সড়ক দিয়ে বেপরোয়া চালানোর সময় তার গাড়ি দুটি রিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে দুই রিকশাচালকসহ চারজন আহত হন। একজন প্রভাবশালী সাবেক এমপির ভাতিজা এ ঘটনায় জড়িত থাকায় পুলিশ সবকিছু ধামাচাপা দিতেই মামলা নেয়নি।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্ঘটনার বেশ কয়েকটি ছবি সোমবার থেকে ঘুরছে। ঘটনার পর থেকে ফারিজের ফেসবুক পেজ ডিঅ্যাকটিভ পাওয়া যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টে ফারিজ রহমানের বন্ধুদের বরাত দিয়ে বলা হয়, গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইলে তাদের রেসিংয়ের ভিডিও করছিল ফারিজ এবং দুর্ঘটনার একটু আগে তার সেলফি তুলে ফটোমেসেজিং স্ন্যাপচ্যাটে দিতে দেখা গেছে। ফারিজের ফেসবুক পেজে তার পরিচয় হিসেবে বিএমডব্লিউর এমডি এবং মেম্বার অব পার্লামেন্ট লেখাও দেখা গেছে। ঘটনার ৩০ মিনিট আগে সে গাড়ি চালানো অবস্থায় সেলফি দিয়েছে বলে বন্ধুসূত্রে জানা গেছে।
গুলশান এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ উদ্দিন বলেন, গুলশানের রাস্তায় এটা খুব সাধারণ ঘটনা। অনেকের গাড়ি চালানো দেখলেই মনে হয়, সেই গাড়ির ভিতরে যিনি তিনিই মানুষ। আর রাস্তায় সব জন্তু-জানোয়ার। তারা যে আবাসিক এলাকার ভিতর দিয়ে প্রতিনিয়ত এমনকি গভীর রাতে রেসিং করে তা সবার জানা।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন
প্রতিক্ষণ/এডি/এনজে